কুরআনে ইয়্যাশাউ বা মাঁয়্যাশাউ শব্দটি এর কয়েকটি গঠনে এসেছে ৫১৯ বারের মতো। কুরআন করপাস থেকে সবগুলো রেফারেন্স দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
মাঁয়্যাশাউ উল্লেখিত কিছু আয়াতের উদাহরন দেখা যাক:
ইয়াগফিরু লি মাইয়্যাশাউ, ওয়া ইউআযযিবু মাঁ-য়্যাশাউ (৩:১২৯)
(আল্লাহ) যাকে খুশি ক্ষমা করেন, যাকে খুশি শাস্তি দান করেন।
ছুম্মা ইয়াতুবুল্লাহু মিন বা'দি যালিকা আলা মাঁয়্যাশাউ। ওয়াল্লাহু গাফুরুর রাহিম (৯:২৭)
এরপর যার নিকট থেকে ইচ্ছা আল্লাহ তার ক্ষমাভিক্ষা কবুল করেন এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
ইন্নাল্লাহা ইউসমিউ মাঁয়্যাশা। (৩৫:২২)
আল্লাহ যাকে খুশি তাকে শ্রবণ করান।
ওয়ালাকিন ইয়ুদখিলু মাঁয়্যাশাউ ফি রাহমাতি (৪২:৮)
কিন্তু তিঁনি যাকে ইচ্ছা তাকে তার রহমতের মধ্যে প্রবেশ করান। এবং অপরাধীরা কোন রক্ষাকারী বা সাহায্যকারী পাবে না।
কাযালিকা ইউদিল্লুল্লাহু মাইয়্যাশাউ ওয়া ইয়াহদি মাঁয়্যাশা। (৭৪:৩১)
সেভাবেই আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা তাকে পথের দিশা দান করেন।
এই আয়াতগুলো পড়লে আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে স্রষ্টা যেন একজন স্বৈরাচারী যে মানুষকে তার ইচ্ছামতো সুপথে, ইচ্ছামতো কুপথে পরিচালিত করেন। এই আপাতদৃষ্টির অর্থ থেকে যেকেউ খুব সহজেই আল্রাহকে একজন স্বেচ্ছাচারী স্রষ্টা মনে হতে পারে।
মনে হতে পারে, স্রষ্টা নিজেই যখন মানুষকে পথভ্রষ্ট করেন (নাউযুবিল্লাহ) সেখানে মানুষের বা আমাদের আর কি করার আছে। যেন তিনিই সবার আগেই ঠিক করে দিচ্ছেন কে দোযখে যাবে আর কে বেহেস্তে যাবে। তাহলে পাপপূণ্যের বিচারের কোন অর্থ হয় না, না হয় মানুষের নিজের প্রচেষ্টার। যেন মানুষের স্বাধীন কর্মের কোন ভূমিকাই মনে হয় এখানে নেই।
অথচ মাঁ-য়্যাশাউ অর্থের এই ভুল অনুবাদ ভয়ংকর।
আসলে কুরআনের পরিভাষায় মাঁয়্যাশাউর অর্থ কি? এ হ'লো ইসলাম, এ ছিলেন মোহাম্মদ (সা.) বইতে ইমামুদ্দিন ত্বোয়াহা বিন হাবীব এর লেখনি থেকে,
...আল্লাহ্ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। তাঁর কোনো প্রকার শরীক নেই। একমাত্র তিনিই সকল সৃষ্টি ও অস্তিত্বের উৎস। তিনিই সবের উৎসক, পালক, দাতা ও নাশক। তিনি চাইলেই ভালোমন্দ সব হয়।
তাই প্রত্যেক মানুষকে সে কী হবে, তার কার্যকর পন্থা অবলম্বন করে তাঁর কাছে তা চাইতে হবে। ঈমানদার হবে কি বেঈমান হবে, মুসলিম হবে কি কাফের হবে, সাধু হবে কি অপরাধী হবে, তার প্রত্যেকটির জন্য আমলের মাধ্যমে তাঁর কাছে চাইতে হবে। এরই অর্থ হলো, আল্লাহ্ যাকে চান, তাকে সৎ পথ দেখান, যাকে চান বিপথে ঠেলে দেন।
যে কল্যাণের পথে চলতে চায়, তাকে কল্যাণের পথের পাথেয় দেন, যে অকল্যাণের পথিক হতে চায়, তাকে অকল্যাণের পথের পাথেয় সরবরাহ করেন। এমনটি কস্মিন কালেও হবার নয় যে কোনো মানুষ ভালো হতে চাইলে আল্লাহ্ তাকে ভালো হতে দিবেন না এবং মন্দ হতে চাইলে তাকে মন্দ হতে বাধা দিবেন। প্রত্যেক মানুষ তার কর্মফলে ভূষিত হবে, এ হলো “মাঁয়্যাশাউ”র অর্থ।
উপরের বুঝটি আরো পরিস্কার হওয়ার জন্য একটি উদাহরন আয়াত উল্লেখ করা হলো:
ইন্নাল্লাহা ইউদিল্লু মাঁয়্যাশাউ ওয়া ইয়াহদীঈ ইলাইহি মান আনাব (১৩:২৭)
নিশ্চই, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে পথভ্রষ্ট করেন এবং যে তাঁর দিকে ফেরে তাকে পথপ্রদর্শন করেন।
COMMENTS